ঢাকা, শনিবার ০৪, মে ২০২৪ ১০:২৮:৫২ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
জনগণ তাদের পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচিত করুক: প্রধানমন্ত্রী সবজির বাজারে স্বস্তি নেই যুদ্ধকে ‘না’ বলতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়েছি ভারী বর্ষণে মহাসড়কে ধস, চীনে ২৪ প্রাণহানি রাজবাড়ীতে ট্রেন লাইনচ্যুত, রেল যোগাযোগ বন্ধ

রফিকুর রশীদ: শিশুসাহিত্যের যোগ্য প্রতিনিধি 

রাশেদ রউফ | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৮:২২ এএম, ২৭ জানুয়ারি ২০২২ বৃহস্পতিবার

ছবি: ২০০৭ সালে রফিকুর রশীদের ৫০ বছর উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ শিশুসাহিত্য একাডেমি আয়োজিত সম্মাননা অনুষ্ঠানে টইটম্বুর সম্পাদক সেলিমা সবিহ ও শিশুসাহিত্যিক রাশেদ রউফ। ছবিটি রাশেদ রউফের ফেসবুক ওয়াল থেকে নেওয়া।

ছবি: ২০০৭ সালে রফিকুর রশীদের ৫০ বছর উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ শিশুসাহিত্য একাডেমি আয়োজিত সম্মাননা অনুষ্ঠানে টইটম্বুর সম্পাদক সেলিমা সবিহ ও শিশুসাহিত্যিক রাশেদ রউফ। ছবিটি রাশেদ রউফের ফেসবুক ওয়াল থেকে নেওয়া।

এবার শিশুসাহিত্যে `বাংলা একাডেমি পুরস্কার ২০২১' পেলেন রফিকুর রশীদ। তাঁর এ পুরস্কারপ্রাপ্তিতে শিশুসাহিত্যকর্মীদের পক্ষ থেকে জানাই অভিনন্দন। 
রফিকুর রশীদ। দেশের সাহিত্যাঙ্গনে বিশিষ্ট নাম। গল্প উপন্যাস তাঁর প্রধান চর্চিত বিষয় হলেও ছড়া, কবিতা, প্রবন্ধ, নাটক, গান প্রভৃতি শাখাতেও তিনি স্বতঃস্ফূর্ত ও খ্যাতিমান।  ছোটোদের জন্য যেমন তিনি সপ্রাণ ও নিবেদিত; তেমনি বড়দের জন্যও অনন্যসাধারণ। লেখালেখির সাম্রাজ্য এমনভাবে বিস্তৃত করেছেন, তাতে তিনি পরিণত হয়েছেন বর্তমান সময়ের অন্যতম সচল জনপ্রিয় লেখকে। কথাসাহিত্যে তিনি তুলে ধরেছেন মানুষের ক্ষোভ ও যন্ত্রণা; বেদনা ও ক্ষরণ, লিপিবদ্ধ করেছেন সংগ্রাম ও অন্তর্গত হাহাকার। জনজীবনের সুখ আনন্দ এবং সকল প্রকার শুভ প্রয়াস অনন্যসাধারণ হয়ে ধরা দিয়েছে তাঁর কথাসাহিত্যে। ছোটোদের জন্য রচিত সমস্ত রচনায় তিনি জীবনের কথাই বলেছেন, বলেছেন স্বপ্নের কথা।
গল্প ও উপন্যাসের প্লটের সন্ধানে তিনি জীবনের নানা পথ অতিক্রম করেছেন, বিষয় করে তুলেছেন চেনা জীবনকে। সঙ্গে রয়েছে নিজস্ব কাহিনি, যা ভাবায় এবং প্রভাবিতও করে। বিষয় বৈচিত্র্য তাঁর কথাসাহিত্যের একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিক। চলমান বাস্তবতার প্রত্যেকটি অনুষঙ্গ তাঁর লেখায় পেয়েছে নতুন মাত্রা। তাঁর কথাসাহিত্যের বিষয় ও নির্মাণ-কৌশল আলাদা। পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়েই তিনি তাঁর গল্প ও উপন্যাসের কাহিনিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। বাক্য গঠন ও শব্দ প্রয়োগে তিনি অত্যন্ত সতর্ক ও অনুসন্ধিৎসু।
কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন তাঁর এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘একজন সাহিত্যিকের জীবনের মৌল বিষয় হচ্ছে মানবতার পক্ষে থাকা -মানুষের অধিকারের পক্ষে থাকা এবং এসবই তার সৃষ্টিকর্মে তুলে ধরলে সামাজিক দায়বদ্ধতার অঙ্গীকার স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তবে পরিবর্তন আসতে পারে ভিন্নভাবে। যেমন একজন মানুষ সামাজিক দায়বদ্ধতার পরিচয় দিতে পারেন দরিদ্র শিশুদের শিক্ষা ক্ষেত্রে সহায়তা দিয়ে। তবে অনেক বড় লেখকই তাদের দায়বদ্ধতা সৃজনশীল কর্মের প্রকাশের মধ্যে দিয়ে দেখাতে চেয়েছেন।’
রফিকুর রশীদ তেমন এক দায়বদ্ধ লেখক। শিল্পিত প্রকাশের মাধ্যমে তিনি প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়েছেন সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়টি। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে অনুষঙ্গ করে প্রচুর ও গুরুত্বপূর্ণ লেখা তিনি আমাদের উপহার দিয়েছেন। যুক্তি, তথ্য ও গভীর অন্তর্দৃষ্টির সমন্বয়ে রচিত গল্প ও উপন্যাসে পাওয়া যায় জীবনবোধ ও প্রজ্ঞার আশ্চর্য বিশ্লেষণ।
অনেকগুলো বই প্রকাশিত হয়েছে তাঁর। তন্মধ্যে রয়েছে :
কিশোর গল্পগ্রন্থ :
স্বপ্নেভরা কিশোরবেলা, ইচ্ছে পুতুল, চার গোয়েন্দার কাণ্ড, গল্পগুলো ক্লাসের নয়, ঈদ মানেই আনন্দ, লাস্ট বেঞ্চের ছেলেটি, আকাশ আবার ফার্স্ট হবে, সৌরভের হারানো ঘুড়ি, সুতোকাটা ঘুড়ি এবং ভূতের গল্প, ভূতের বাড়ি হাত বাড়ানো, বারো রাজ্যের রূপকথা, প্রভাতফেরি, একুশের কিশোর গল্প, মুক্তিযুদ্ধের কিশোর গল্প, রাসেলের জন্য ভালোবাসা, নজরুল জীবনের গল্প, রবীন্দ্র-নজরুল : ছেলেবেলার গল্প, বিজয় দেখার দিন, একাত্তরের সূর্যোদয়, বিজয় দেখার দিন, বরণীয় জীবনের স্মরণীয় গল্প, বঙ্গবন্ধু ও শেখ রাসেল : ছেলেবেলার গল্প, মধুমতি পাড়ের খোকা, বঙ্গবন্ধু কিশোরসমগ্র। মধুমতি পাড়ের খোকা ।
কিশোর উপন্যাস :
অপারেশন মুজিবনগর, কাজল ইজ এ গুড বয়, পরীবানু আবার স্কুলে যাবে, ইভানের বিয়ে, বীরের মাটি, পিন্টু বাহিনীর যুদ্ধযাত্রা, ইদিপাসের গল্প, এক যে ছিল রাজকন্যা, এক যে ছিল রাখালরাজা, ফিরে এলো রাজপুত্তুর, ভুতুড়ে ক্লাব এবং আমাদের পাইলট স্যার, ভালো ভূতের যতো কাণ্ড, আমাদের স্কুলে সত্যিই ভূত ছিল না।
ছড়া ও কিশোরকাব্য :
জন্মদিনের ছড়া (পৃথিবী সৃষ্টির ইতিহাস), যুদ্ধদিনের ছড়া, ছড়ার বাড়ি কড়া নাড়ি, ভাষার লড়াই ছড়ায় ছড়ায়, মশকরানির মন্ত্রীসভায়, ছড়ার পাখি ডাকে আমায়, নূর হোসেন এক কাব্যলেখা, আকাশজোড়া মায়ের আঁচল, চিরঞ্জীব বঙ্গবন্ধু।
প্রবন্ধ :
সাতকাহনের গদ্য, রবীন্দ্রনাথ : পত্রপুট
নাটক :
জন্মদিনের গল্প।
ভ্রমণকাহিনি :
ভালো মানুষের দেশে (আফ্রিকার ভ্রমণগদ্য)।
গবেষণা :
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর, মেহেরপুর জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ : কিশোর ইতিহাস, বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের কিশোর ইতিহাস, বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতি : মেহেরপুর জেলা।
সম্পাদিত গ্রন্থ :
নির্বাচিত একুশের গল্প, মুক্তিযুদ্ধের নির্বাচিত গল্প, মুক্তিযুদ্ধের শ্রেষ্ঠ কিশোর গল্প, এই সময়ের মুক্তিযুদ্ধের গল্প, রাসেল আমাদের ভালোবাসা, আলোকিত বঙ্গবন্ধু।
এছাড়া আছে বড়দের গল্পগ্রন্থ :
হলুদ দোয়েল, স্বপ্নের ঘরবাড়ি, দিনযাপনের দায়, এইসব জীবনযাপন, জীবনের যতো জলছবি, শেকড়ছেঁড়া মানুষের গল্প, রৌদ্রছায়ার নকশা, প্রেমের গল্প, অশনিপাতের দিন, না গৃহ না সন্ন্যাস, সাদা মেঘের পালক, দ্বিতীয় জন্মের কুহক, প্রথম কদমফুল, অন্ধকারের উৎস হতে, অন্যযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের গল্প, গল্পগুলো বঙ্গবন্ধুর, গল্পসমগ্র-১, ২ ও ৩।
বড়দের উপন্যাস :
হৃদয়ের একূল ওকূল, দারুচিনি দ্বীপের ভেতর, দাঁড়াবার সময়, ছায়ার পুতুল, নিষিদ্ধ সুবাস, বাড়ির নাম সংশপ্তক, খননেররাত, চার দেয়ালের ঘর, ভালবাসার জলছবি, পাপী পিয়া এবং পদ্মফুল, প্রস্তুতিপর্ব।
রফিকুর রশীদের জন্ম : ২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৫৭, মেহেরপুর। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনার্সসহ এম.এ. ডিগ্রির পর বেছে নিয়েছিলেন অধ্যাপনাকে। দীর্ঘদিন গাংনী কলেজে অধ্যাপনা শেষে এখন অবসর জীবন যাপন করছেন। লেখালেখির স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ইতোমধ্যে পেয়েছেন বহু পুরস্কার ও সম্মাননা। তন্মধ্যে রয়েছে : ফিলিপস্ গল্প লেখা পুরস্কার, এম. নূরুল কাদের শিশুসাহিত্য পুরস্কার, সাতক্ষীরা সাহিত্য একাডেমী সম্মাননা স্মারক, চন্দ্রাবতী একাডেমী শিশুসাহিত্য সম্মাননা, কাজী কাদের নেওয়াজ জন্মশতবার্ষিকী সম্মাননা, ডা. লুৎফর রহমান স্মৃতি সাহিত্য পদক, কবি সিকান্দার আবু জাফর সাহিত্য পুরস্কার, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার, অধ্যাপক খালেদ শিশুসাহিত্য পুরস্কার, বগুড়া লেখকচক্র স্বীকৃতি ও সম্মাননা, কথাসাহিত্যকেন্দ্র পদক, কাঙাল হরিনাথ পদক ও পুরস্কার, অরণি সাহিত্য পুরস্কার, অরিন্দম-চুয়াডাঙ্গা শুভেচ্ছা স্মারক, দিজেন্দ্র পুরস্কার (পশ্চিমবঙ্গ)।